তাওহীদের মহাবাণী গোপন রাখতে পারবো না

হযরত আবুযার আরবের গিফার গোত্রের লোক। মক্কা থেকে অনেক দূরে বাস করেন তিনি। সত্যানুসন্ধি আবুযার শুনলেন মক্কায় একজন নবী আবির্ভূত হয়েছেন।

আবুযার মক্কায় গিয়ে তাঁর সাক্ষাত লাভের মনস্থ করলেন। কিন্তু কুরাইশদের শ্যেন দৃষ্টির সামনে তাঁকে খুঁজে বের করে সাক্ষাত করা নিরাপদ নয়। তবু আবুযার মক্কায় চললেন। সত্যসন্ধানী আবুযারকে সত্য প্রচারকের সাক্ষাত যে পেতেই হবে। মক্কায় গিয়ে তিনদিন মৌন অনুসন্ধানের পর আবুযর মহানবীর (সা.) সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করলেন। নবীর সাক্ষাত পেয়েই সত্যের জন্য পাগল পারা আবুযার ইসলাম গ্রহন করলেন। মহানবী (সা.) আবুযারকে উপদেশ দিলেন, “ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখে তুমি নীরবে দেশে ফিরে যাও।”

ইসলাম গ্রহণ করে আবুযার কিন্তু আর স্থির থাকতে পারলেন না। যে সত্য গ্রহণের জন্য এতদিন তিনি পাগল প্রায় ছিলেন, সে সত্য প্রচারের জন্য এতদিন তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। তাঁর মনে কাঁটার মত বিঁধতে লাগলো। ফুল শয্যায় শয়ন করে কাল কাটাবার জন্য আবুযার ইসলাম গহন করেননি কিংবা নিরাপদে মুসলমান হয়ে থাকার বাহবাও তো আবুযরের জন্য নয়। তাহলে আবুযার চুপ করে থাকবে কেন? এই চিন্তা আবুযরকে চুপ থাকতে দিলো না,

স্থির হতে দিলোনা। হযরত আবুযার বিনীতভাবে মহা নবীর (সা) কাছে নিবেদন করলেন, “তাওহীদের মহাবাণী আমি গোপন রাখতে পারবো না, কাফিরদের মধ্যে গিয়ে চেঁচিয়ে তা ঘোষনা করব।”

যে আবুযর কাফিরদের ভয়ে মক্কায় মহানবীর (সা) নাম পর্যন্ত নিতে সাহস করেননি, সকলের চোখ এড়িয়ে গোপনে তিনদিন ধরে যে আবুযর মহানবীকে (সা) খুঁজে ফিরেছেন কালেমা তাওহীদ উচ্চারণের পর সেই আবুযর সমস্ত ভয়-ভীতি, অত্যাচার, এমন কি মৃত্যুভয়ের আশংকাকেও জয় করে নিলেন। কিছুই আর তাঁকে পেছনে টানতে পারলোনা। মহা নবীর (সা) কাছ থেকে হযরত আবুযার ছুতে এলেন কাবার চত্বরে। সেখানে অনেক কুরাইশ জটলা পাকিয়ে বসেছিল। আবুযার কাবা গৃহের সামনে গিয়ে বজ্র নির্ঘোষে ঘোষণা করলেন, “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। মুহাম্মাদ (সা) তাঁর রাসূল।”

হযরত আবুযারের তাওহীদ ঘোষণা বোধয় কুরাইশদের হৃদয়ে তীরের মত বিদ্ধ হয়েছিল। তারা আহত হিংস্র পশুর মত ছুটে এল আবুযারকে লক্ষ্য করে। সবাই মিলে চারদিক থেকে নির্মম প্রহার শুরু করল তাঁর উপর। আঘাতে আঘাতে আবুযারের দেহ ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেল। রক্তে ভিজে গেল কাপড় চোপড়। ঢলে পড়লেন মাটিতে। তিনি মুমূর্ষ।

সেখানে হযরত আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখনও মুসলমান না হলেও ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মাদকে (সা) অত্যন্ত ভালবাসতেন। তিনি মুমূর্ষু আবুযারের দেহকে নিজের দেহ

 দিয়ে আড়াল করে উন্মাদ প্রায় কুরাইশদের বলতে লাগলেন, “কি সর্বনাশ! এ যে গিফার গোত্রের লোক। সিরিয়া যাওয়ার পথেই এদের নিবাস। এর এভাবে মৃত্যু হলে সিরিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য করার পথই যে আমাদের বন্ধ হয়ে যাবে।” একথা শুনে কুরাইশদের সম্বিত ফিরে এলো। তাদের মনে হলো, আব্বাস তো ঠিকই কথা বলেছেন। তারা আবুযরকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল। এ অমানুষিক নিপীড়ন হযরত আবুযরকে সত্যের প্রচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এই ঘটনার পরও তিনি পরপর দু’দিন কাবার চত্বরে গিয়ে উচ্চ কণ্ঠে তাওহীদের বাণী ঘোষণা করেছেন। অত্যাচার-নিপীড়নেরও পুনরাবৃত্তি হয়েছে। কিন্তু আবুযর সত্যের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছুকেই মেনে নিয়েছেন হাসি মুখে। অদ্ভুত শক্তি তাওহীদের। মনে প্রানে একবার এ কালেমা পাঠ করলে মানুষের মনে যে শক্তির বন্যা আসে, তার সামনে থেকে জগতের সব অত্যাচার, সব যুলুম আর তার ভয় তৃণ খণ্ডের মত ভেসে যায়।

Published by Imam mahedi

I am a muslim

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started